শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা

বাংলাদেশি রান্নার ঐতিহ্যে শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা একটি জনপ্রিয় এবং মুখরোচক খাবার। খাবাররি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও কিছু অঞ্চলে খাবারটি বিশেষ কিছু অনুষ্ঠানে তৈরি করা হয়। তবে শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা খাবারটি বিভিন্ন সুগন্ধি, মসলাদার এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী রান্নার স্বাদ শহুরে জীবনে নিয়ে আসার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে “শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা”। আসুন এই রেসিপিটি ধাপে ধাপে শিখি এবং জানি কীভাবে তৈরি করতে হয়।

শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা উপকরণ

আপনার ঘরে যদি শুটকি থেকে থাকে তাহলে খুব সহজেই আপনি তৈরি করে নিতে পারেন শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা রেসিপিটি। তবে রেসিপির জন্য বেশ কিছু উপকরণ প্রয়োজন হয়ে থাকে। এ সকল উপকরণ বেশ সহজলভ্য হওয়ায় খুব সহজে খাবারটি তৈরি করা যায়। প্রয়োজনীয় উপকরণ সমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • শুকনো সিমের বিচি: ১/২ কাপ
  • পেঁয়াজ কুচি: ১ কাপ
  • আলু: ২টি, মোটা করে কাটা (ঐচ্ছিক)
  • কাঁচামরিচ: পরিমাণমতো ফালি করে কাটা
  • হলুদের গুঁড়া: আধা চা চামচ
  • মরিচের গুঁড়া: ৩ চা চামচ
  • ধনিয়ার গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
  • লবণ: স্বাদমতো
  • তেল: রান্নার জন্য প্রয়োজনমতো
  • শুটকি মাছ: চ্যাপা, লইটা, বাসপাতি, বা সিদল শুকনা অথবা ভেজা শুটকি

শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা রান্নার পদ্ধতি

বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে খুব সহজেই শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনা রান্না করা যায় তবে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মূলত ধাপে ধাপে রান্নার প্রথম স্তর থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সকল তথ্য আপনাকে বিস্তারিত আকারে জানাবো। নিম্নে ধাপ আকারে সকল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে:

প্রথম ধাপ: শুকনো সিমের বিচি প্রস্তুত করা

  • ১. কাঁচা সিমের বিচি হলে, গরম বালুর মধ্যে অনবরত নেড়ে ভেজে নিন।
  • ২. ভাজার পর এটি চালের বস্তা বা কোলার উপর রেখে শিল পাটার সাহায্যে হালকা পিষে দিন। এতে কালো খোসাগুলো সহজেই আলাদা হয়ে যাবে।
  • ৩. ঝেড়ে ফেলা হলে বিচিগুলো ধুয়ে নিন এবং ২০ মিনিটের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • ৪. এরপর বিচিগুলো এবং আলু একসঙ্গে অল্প পানি দিয়ে ভাপে সেদ্ধ করে নিন।

দ্বিতীয় ধাপ: শুটকির প্রস্তুতি

  • ১. শুকনা শুটকি হলে, সুটকি মাছ ধুয়ে নিন এবং ১০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • ২. এরপর শিল-পাটায় ছেচে মাছ ঝুরি করে নিন।
  • ৩. ঝুরি করা শুটকি এই রেসিপির প্রধান উপাদান। এটি ভুনার সময় বিশেষ স্বাদ আনবে।

তৃতীয় ধাপ: ভুনা করার প্রক্রিয়া

  • ১. প্যানে প্রয়োজনমতো তেল গরম করুন।
  • ২. তেলে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা লালচে করে ভেজে নিন।
  • ৩. এবার হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া এবং লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
  • ৪. ঝুরি করা সুটকি দিয়ে মসলা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  • ৫. এরপর সেদ্ধ করা সিমের বিচি এবং আলু প্যানে দিয়ে নেড়ে দিন।

চতুর্থ ধাপ: চূড়ান্ত রান্না

  • ১. সব উপাদান মিশে গেলে এক কাপ পানি এবং কাঁচামরিচ দিয়ে প্যানে ঢেকে দিন।
  • ২. মাঝারি আঁচে এটি ফুটতে দিন।
  • ৩. ফুটে উঠলে ঢাকনা খুলে দিয়ে মাঝারি-উচ্চ আঁচে নেড়ে ভুনা করে নিন।
  • ৪. যতক্ষণ না মসলা এবং উপাদান ভালোভাবে মিশে এবং তেলের উপর ভেসে ওঠে, ততক্ষণ রান্না চালিয়ে যান।

পরিবেশন

শুকনো সিমের বিচি দিয়ে সুটকি ভুনা প্রস্তুত হয়ে গেলে এটি গরম গরম পরিবেশন করুন। সাদা ভাতের সঙ্গে এই পদ এক কথায় অনবদ্য। গ্রামীণ ঘরোয়া পরিবেশে এই রেসিপি খেতে যেমন মজাদার, তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কিছু কিছু অঞ্চলে কোন সিমের বিচি শুটকি দিয়ে ভুনা আঞ্চলিক প্রচলিত ভাষায় ফেনা ভাতের সাথে খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।

খাবারটির পুষ্টিগুণ

প্রতিটি খাবারের মতো শুকনো সিমের বিচি দিয়ে শুটকি ভুনার পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক। যেমন:

  • এই রেসিপিটি শুধু সুস্বাদু নয়, এটি পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ।
  • শুকনো সিমের বিচি: প্রোটিন এবং ফাইবার সরবরাহ করে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • শুটকি মাছ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, এবং মিনারেলে ভরপুর।
  • পেঁয়াজ এবং কাঁচামরিচ: ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে।
  • আলু: কার্বোহাইড্রেটের একটি চমৎকার উৎস।

বিশেষ টিপস

আপনার অবশ্যই বেশ কিছু টিপস জেনে রাখা প্রয়োজন যা আপনার খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক। যেমন:

  • সিমের বিচি এবং সুটকি ভুনার সময় মসলা যাতে পুড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন
  • কাঁচামরিচের পরিমাণ আপনার ঝাল পছন্দের উপর নির্ভর করে বাড়াতে বা কমাতে পারেন।
    যদি বাসপাতি বা লইটা সুটকি ব্যবহার করেন, তবে রান্নার সময় এর গন্ধ কমাতে সুটকি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।

খাবারটি নিয়ে কিছু কথা

“শুকনো সিমের বিচি দিয়ে সুটকি ভুনা” শুধুমাত্র একটি রেসিপি নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী রান্নার অন্যতম অংশ। সহজলভ্য উপাদান, সহজ পদ্ধতি এবং সুস্বাদু স্বাদ এই রেসিপিকে সবার কাছে প্রিয় করে তুলেছে। আপনি যদি ঐতিহ্যবাহী খাবার পছন্দ করেন, তবে এই রেসিপি তৈরি করতে অবশ্যই চেষ্টা করুন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top